গ্যালভানিক কোষ বা ভোল্টায়িক কোষ (Galvanic Cell or voltaic Cell)
গ্যালভানিক বা ভোল্টায়িক কোষ হলো সেই সকল কোষ, যেখানে কোষের ভিতরের পদার্থসমূহের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা হয়। গ্যালভানিক কোষে সাধারণত দুটি ভিন্ন মৌল দিয়ে তৈরি দুটো ইলেকট্রোডকে দুটি ভিন্ন পাত্রের তড়িৎ বিশ্লেষ্যের দ্রবণের মধ্যে আংশিকভাবে ডুবানো থাকে। তড়িৎদ্বার দুইটির মধ্যে অধিক সক্রিয় ধাতুর ইলেকট্রোড অ্যানোড আর কম সক্রিয় ধাতুর ইলেকট্রোড ক্যাথোড হিসেবে কাজ করে। কোনো তড়িৎদ্বার যে ধাতু দিয়ে তৈরি সেই ধাতুর তড়িৎদ্বারকে এমন একটি তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে রাখতে হবে যেন তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে সেই ধাতুর আয়ন থাকে। যেমন— কপার ধাতুর দণ্ড দিয়ে যদি তড়িৎদ্বার তৈরি করা হয় তবে ঐ দণ্ডকে CuSO4 তড়িৎ বিশ্লেষ্যের দ্রবণে রাখা হয়। আবার, জিংক ধাতুর দণ্ড দিয়ে যদি তড়িৎদ্বার তৈরি করা হয় তবে ঐ দণ্ডকে ZnSO4 তড়িৎ বিশ্লেষ্যের দ্রবণে রাখা হয়। তড়িৎদ্বার দুটিকে বাইরে থেকে ধাতব তার দিয়ে সংযোগ করলে এক তড়িৎদ্বার থেকে অপর তড়িৎদ্বারে ইলেকট্রন প্রবাহিত হয় অর্থাৎ বিদ্যুৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়। দুইটি তড়িৎ বিশ্লেষ্যের দ্রবণের মধ্যে U আকৃতির লবণ সেতু স্থাপন করা হয়। U আকৃতির একটি কাচনলে KCl লবণের দ্রবণ থাকে। গ্যালভানিক কোষের অ্যানোড, ক্যাথোড়, তড়িৎদ্বারে বিক্রিয়া, লবণ সেতুর ভূমিকা এগুলো ভালোভাবে বুঝতে তোমাদের জন্য ডেনিয়েল কোষের গঠন আলোচনা করা হলো।
ডেনিয়েল কোষ (Daniell cell) জন ফ্রেডরিক ডেনিয়েল 1836 সালে এ কোষটি প্রথম আবিষ্কার করেন। তাঁর সম্মানে এ কোষকে ডেনিয়েল কোষ বলে। দুইটি কাচ বা চিনামাটির পাত্রের একটিতে জিংক সালফেট দ্রবণ এবং অপরটিতে কপার সালফেট দ্রবণ নেওয়া হয়। জিংক সালফেট দ্রবণে জিংক দণ্ড আর কপার সালফেট দ্রবণে কপারের দণ্ড প্রবেশ করানো হয়। পাত্র দুইটির দ্রবণের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য চিত্রের মতো U আকৃতির লবণ সেতু দুইটি দ্রবণের মধ্যে ডুবানো হয়। এবার একটি ধাতব তার দিয়ে তড়িৎযার দুইটি সংযোগ ঘটানো হয়। তারের মাঝে একটি বাল্ব থাকলে এবং তারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত শুরু হলে বাল্বটি জ্বলে উঠে। এখানে জিংক তড়িৎদ্বারে জিংকের একটি পরমাণু দুইটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে জিংক আয়নে (Zn2+) পরিণত হয়। এই জিংক আয়ন তড়িৎবার ছেড়ে দ্রবণে প্রবেশ করে। ইলেকট্রন দুইটি জিংক তড়িৎদ্বার গ্রহণ করে। ফলে এ তড়িৎবার ঋণাত্মক চার্জযুক্ত হয়। এই ইলেকট্রন দুইটি তড়িৎদ্বার দুইটিকে যে তার দিয়ে সংযোগ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। যেহেতু জিংকের তড়িৎদ্বারে ধাতব Zn থেকে Zn2+ পরিণত হয়, সেহেতু বলা বার এ তড়িৎদ্বারে জারণ বিক্রিয়া ঘটে। তাই এ তড়িৎদ্বার হলো অ্যানোড।
অ্যানোডে জারণ বিক্রিয়া: Zn Zn2+ + 2e-
এবার জিংক অ্যানোড থেকে আসা ২টি ইলেকট্রন কপার তড়িৎদ্বারে প্রবেশ করে। এ তড়িৎদ্বার থেকে CuSO4 দ্রবণের Cu2+ আরন দুইটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে ধাতব কপারে (Cu) পরিণত হয়। কপার তড়িৎদ্বারে বিজ্ঞারপ ঘটেছে বলে কপার তড়িৎদ্বার ক্যাথোড তড়িৎদ্বার হিসেবে বিবেচিত।
ক্যাথোডে বিজারণ বিক্রিয়া: Cu2+ + 2e- Cu
সামগ্রিক কোষ বিক্রিয়া: Zn + Cu2+ Zn2 + +Cu
অ্যানোডে জিংক ইলেকট্রন দান করে বলে অ্যানোডে জারণ বিক্রিয়া ঘটেছে। কিন্তু শুধু ইলেকট্রন দান করলে বিক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। এ ইলেকট্রন গ্রহণও করতে হবে। ক্যাথোড তড়িৎদ্বারে জিংকের দান করা ইলেকট্রন কপার আয়ন গ্রহণ করে বিজারণ বিক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। অর্থাৎ অ্যানোডে অর্ধেক বিক্রিয়া আর ক্যাথোডে অপর অর্ধেক বিক্রিয়া ঘটেছে।
তাই অ্যানোডের বিক্রিয়াকে জারণ অর্ধবিক্রিয়া আর ক্যাথোডের বিক্রিয়াকে বিজারণ অর্ধবিক্রিয়া বলা হয়েছে। কোষ বিক্রিয়া যেহেতু ক্যাথোডের বিক্রিয়া আর অ্যানোডের বিক্রিয়ার যোগফল, তাই কোষ বিক্রিয়া হলো জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া।
অ্যানোড থেকে ইলেকট্রন তারের মধ্য দিয়ে ক্যাথোডে প্রবেশ করে অর্থাৎ তারের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রন বা বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় অর্থাৎ বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন হয়েছে। অর্থাৎ গ্যালভানিক কোষে রাসায়নিক শক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
টেবিল 8.03: তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ ও গ্যালভানিক কোষের পার্থক্য।
তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ | গ্যালভানিক কোষ |
যে কোষে তড়িৎ শক্তি ব্যবহার করে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো হয় তাকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ বলে। | যে কোষে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয় তাকে গ্যালভানিক কোষ বলে। |
তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষে অ্যানোড ধনাত্মক চার্জযুক্ত এবং ক্যাথোড ঋণাত্মক চার্জযুক্ত। | গ্যালভানিক কোষে অ্যানোড ঋণাত্মক চার্জযুক্ত কিন্তু ক্যাথোড ধনাত্মক চার্জযুক্ত। |
কোনো মৌল বা যৌগ উৎপাদন, ইলেকট্রোপ্লেটিং, ধাতু বিশোধন প্রভৃতি কাজে তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ ব্যবহার করা হয়। | তড়িৎ শক্তি উৎপাদন করার যন্ত্র যেমন- ব্যাটরি তৈরিতে গ্যালভানিক কোষ ব্যবহৃত হয়। |
গ্যালভানিক কোষের তড়িৎদ্বার: গ্যালভানিক কোষের নানা ধরনের তড়িৎদ্বার রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে সহজে তৈরি করা যায় ধাতু-ধাতুর আয়ন তড়িৎদ্বার। এ ধরনের তড়িৎদ্বারগুলোকে তৈরি করতে কোনো ধাতুর দণ্ড বা পাতকে সেই ধাতুর আয়নবিশিষ্ট দ্রবণে অর্ধেক বা অর্ধেকের বেশি পরিমাণে নিমজ্জিত করে তৈরি করা হয়। এ তড়িৎদ্বারকে লিখে প্রকাশ করতে হলে প্রথমে ধাতু তারপর ধাতুর আয়নকে পাশাপাশি লিখে দুটির মাঝখানে খাড়া দাগ দিতে হয়। যেমন— জিংক ধাতুর দণ্ডকে ZnSO4 এর দ্রবণের মধ্যে রাখলে জিংক ধাতুর তড়িৎদ্বার তৈরি হয়ে গেল। একে Zn|Zn2+ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এ তড়িৎদ্বারে নিম্নরূপ বিক্রিয়া ঘটে।
Zn Zn2+ + 2e-
অধিক সক্রিয় ধাতু যেমন-সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি ধাতুর তড়িৎদ্বার এভাবে তৈরি হয় না।
গ্যালভানিক কোষে অ্যানোড এবং ক্যাথোড শনাক্তকরণ
দুইটি তড়িৎদ্বার দিয়ে কোনো গ্যালভানিক কোষ তৈরি করলে কোনটি অ্যানোড এবং কোনটি ক্যাথোড হবে তা নির্ভর করে সেগুলো কোন মৌল দিয়ে তৈরি তার উপর। তড়িৎ রাসায়নিক সারির উপরের দিকে অবস্থিত অধিক সক্রিয় মৌলের তড়িৎদ্বার অ্যানোড এবং তড়িৎ অবস্থিত অপেক্ষাকৃত কম সক্রিয় মৌলের তৈরি ইলেকট্রোড ক্যাথোড হিসেবে কাজ করে। তড়িৎ রাসায়নিক সারির যেকোনো 2টি ধাতুর মধ্যে যে ধাতুটি উপরে অবস্থিত সে ধাতুর দণ্ডটি অ্যানোড এবং যে ধাতুটি নিচে অবস্থিত সে ধাতুর দণ্ডটি ক্যাথোড হিসেবে কাজ করে।
এই তড়িৎ রাসায়নিক সারি থেকে যেকোনো দুইটি ধাতুর তড়িৎদ্বার তৈরি করে ঐ তড়িৎদ্বার দুটি দিয়ে যদি গ্যালভানিক কোষ তৈরি করা হয় তবে সারিতে তুলনামূলক উপরে অবস্থিত ধাতুর তড়িৎদ্বারটি অ্যানোড আর তুলনামূলক নিচে অবস্থিত ধাতুর তড়িৎদ্বারটি ক্যাথোড হিসেবে কাজ করবে। যেমন কপার ধাতু ও সিলভার ধাতুর তড়িৎদ্বার দিয়ে গ্যালভানিক কোষ তৈরি করা হয় তবে কপার ধাতুর তড়িৎদ্বারটি অ্যানোড আর সিলভার ধাতুর তড়িৎদ্বারটি ক্যাথোড হিসেবে কাজ করবে। যেহেতু তড়িৎ রাসায়নিক সারিতে কপার ধাতুর অবস্থান উপরে আর সিলভার ধাতুর অবস্থান নিচে। এই কোষে কপার পরমাণু ইলেকট্রন ত্যাগ করে কপার আয়নে পরিণত হয়।
লবণ সেতু ও তার ব্যবহার
তোমরা ডেনিয়েল কোষে দেখেছো অ্যানোডে ধাতব জিংক দুইটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে জিংক আয়নে পরিণত হয়। এ ইলেকট্রন বাইরের তার দিয়ে ক্যাথোডে যায়। ফলে অ্যানোডের দ্রবণে ধনাত্মক আয়ন বেশি হয়ে যায়।
অ্যানোডে জারণ অর্ধবিক্রিয়া: Zn+ Zn2+ + 2e
আবার, ক্যাথোডে থাকা CuSO4 এর দ্রবণ থেকে Cu2+ আয়ন দুইটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে আধান নিরপেক্ষ Cu পরমাণুতে পরিণত হয় কিন্তু So42- আয়নের কোনো পরিবর্তন হয় না। ফলে প্রবণ ঋণাত্মক আধান প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ দুইটি দ্রবণের আধান নিরপেক্ষতা নষ্ট হয়। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যে বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এই বিক্রিয়া চালু রাখার জন্য লবণ সেতু ব্যবহার করা হয়। একটি U আকৃতির কাচের নদের মধ্যে আগার আগার নামের একটি রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে KCl লবণের প্রবণ মেশানো হয়। ফলে জেলির মতো মিশ্রণ তৈরি হয়। একে লবণ সেতু বলে। এই লবণ সেতুতে বিদ্যমান K+ আয়ন ও Cl- আয়ন এর গতি সমান । KCl দ্রবণ দিয়ে তৈরি লবণ সেতুর দুই মুখে তুলা দিয়ে চিত্রের মতো পরোক্ষভাবে দুইটি তড়িৎ বিশ্লেষ্যের দ্রবণকে সংযোগ দেওয়া হয়।
এখন অ্যানোডের দ্রবণে যতগুলো ধনাত্মক চার্জ বেশি হয় লবণ সেতু থেকে ততগুলো Cl- জায়ন অ্যানোড দ্রবণে চলে আসে। জাবার ক্যাথোডের দ্রবণে যতগুলো ধনাত্মক চার্জ কমে যার লবণ সেতু থেকে ততগুলো K+ আরন ক্যাথোড দ্রবণে চলে আসে। ফলে অ্যানোড ও ক্যাথোড উভয় দ্রবণের তড়িৎ নিরপেক্ষতা বজায় থাকে। ফলে কোষের তড়িৎ প্রবাহ নির্বিঘ্নে চলতে থাকে।
ড্রাই সেল
ড্রাই সেল (কোষ) এক ধরনের গ্যালভানিক কোষ। ড্রাই সেলের মাধ্যমে রাসায়নিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। আমরা সাধারণত টর্চলাইট জ্বালাতে, রেডিও বাজাতে, টিভির রিমোট চালাতে, খেলনা চালাতে ড্রাই সেল ব্যবহার করি। ড্রাই সেলও অ্যানোড এবং ক্যাথোড দ্বারা গঠিত।
ড্রাই সেলের অ্যানোড ও ক্যাথোড প্রান্তকে যদি বাল্ব বা কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রের দুই প্রান্তে যুক্ত করা হয় তখন ইলেকট্রনের প্রবাহ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। তাহলে যেখানে বিদ্যুৎ প্রয়োজন সেখানে ড্রাই সেন সংযুক্ত করলেই উল্লিখিত বিক্রিয়াসমূহ সংঘটিত হবে এবং আমরা বিদ্যুৎ শন্তি পাব।
তড়িৎ রাসায়নিক কোষের প্রয়োগ
প্রাচীনকাল থেকেই তড়িৎ বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করে এক ধাতুর উপর অন্য ধাতুর প্রলেপ ব্যবহার করা হতো। তবে এখন তড়িৎ বিশ্লেষণ কৌশলের ব্যবহার আরও ব্যাপক। তড়িৎ বিশ্লেষণের সাহায্যে আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশন, মূল্যবান রাসায়নিক পদার্থের উৎপাদন, বিদ্যুৎ শক্তির উৎপাদন, পদার্থের বিশুদ্ধকরণ ইত্যাদি করা হয়। হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এতে অ্যানোডে হাইড্রোজেন অণু জারিত হয় আর ক্যাথোডে অক্সিজেন অণু বিজারিত হয়ে পানি উৎপাদন করে। ফলে কোষে ইলেকট্রন অ্যানোড হতে ক্যাথোডে ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়। এই বিদ্যুতের সাহায্যে গাড়ি পর্যন্ত চলতে পারে। সারা পৃথিবীতে কতো মোবাইল ফোন, কতো কম্পিউটার, কতো ক্যালকুলেটর ব্যবহৃত হচ্ছে চিন্তা করতে পারছো, সব ক্ষেত্রে ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়।
ডায়াবেটিক রোগীর রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নির্ণয় করার জন্য তড়িৎ বিশ্লেষণ কৌশলনির্ভর সেন্সর ব্যবহার করা হয়। চিত্রে তড়িৎ বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করে মানবদেহের রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নির্ণয় দেখানো হলো। বাম হাতের আঙুলে লাগানো ছোট অংশটিতে পাতলা ও চিকন অ্যানোড ও ক্যাথোড লাগানো আছে। অ্যানোড ও ক্যাথোডের মাঝখানে একটা ছোট ফাঁকা নালি (channel ) থাকে। যদি অ্যানোড ও ক্যাথোডের মাঝখানে ফাঁকা নালিতে রক্ত দেওয়া হয়, তাহলে একটি পুর্ণ তড়িৎ কোষ গঠিত হবে। আসলে, ফাঁকা নালিতে রক্ত দিলে কোবে সংযুক্ত উৎস হতে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে রাষ্ট্র অবস্থিত গ্লুকোজ অণু অ্যানোডে জারিত হয়। অন্যদিকে, হিসাব-নিকাশ করার যন্ত্রের সাহায্যে গ্লুকোজের জারণের ফলে উদ্ভূত ইলেকট্রনের সংখ্যা নির্ণয় করে যন্ত্রটি তার পর্দায় (screen) রক্তে অবস্থিত গ্লুকোজের পরিমাণ মনিটরে ডিজিটের (digit) সাহায্যে প্রকাশ করে। মজার ব্যাপার হলো এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নির্ণয় করতে এক মিনিট বা তার কম সময় লাগে ।
স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর ব্যাটারির প্রভাব
আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যাটারি ব্যবহার করি। ড্রাই সেল (dry cell) টর্চলাইট জ্বালানোর কাজে, লেড- স্টোরেজ ব্যাটারি (lead storage battery) বাস, ট্রাক ইত্যাদির ব্যাটারি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এসব ব্যাটারিতে বিভিন্ন ধাতু এবং ধাতব আয়ন ব্যবহার করা হয়। যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ড্রাই সেলে দস্তা (Zn) ও ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইড (MnO2) থাকে, লেড স্টোরেজ ব্যাটারিতে সিসা (Pb) ও সিসার অক্সাইড (PbO2 ) ইত্যাদি থাকে। রাসায়নিক ধর্মের বিবেচনায় এগুলো বিষাক্ত (toxic) ও ক্যানসার সৃষ্টিকারী (carcinogenic)। এগুলো ব্যবহারের পর আমরা যেখানে সেখানে ফেলে দেই। ফলে এ সকল বিষাক্ত পদার্থ মাটি ও পানির সাথে মিশে মাটি ও পানিকে দূষিত করে তোলে।